My life Story

গোলক ধাঁদার চোরাবালী।

আজ আমি আপনাদের একটা গল্প শুনাবো যেটা আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি মর্মান্তিক দূর্ঘটনার একটি। যদিও আমি কোন লেখক নই, যদি লেখক হতে পারতাম তাহলে হয়ত লেখাটিকে কোন নায়ক-নায়িকা দ্বারা কাল্পনিক ভাবে উপস্থাপন করতে পারতাম। যেহেতু আমি কোন লেখক নই তাই আমার জীবনের ঘটনা আমার কথা বলে চালিয়ে দেয়াই ভালে বলে মনে করি। তাতে আমার জীবনের কিছুটা বোঝা হালকা হবে।
আমার গ্রামের বাড়ী ফরিদপুর জেলার গোয়ালচামট এলাকায় এটা ফরিদপুর জেলার সদর থানার অর্ন্তগত। আজ থেকে ১৭-১৮ বছর আগের কথা আমার বয়স তখন মাত্র ১৩-১৪ আমি অষ্টম অথবা নবম শ্রেনীতে পড়ি। আমাদের পারিবারে সদস্য সংখ্যা মাত্র ৫ জন। আমরা দুই ভাই এক বোন আর আমার মা - বাবা এ নিয়ে আমাদের সংসার। আমার বাবা একজন সরকারী চাকুরীজিবী হওয়ায় আমাদের আর্থিক আবস্থা ভালো ছিলো আমাদের সংসারে অভাব বলে কোন কিছু ছিলোনা (টানাটানির উপর চলে জাচ্ছিলো)। অন্যদিকে আমার মেঝো মামার সংসার অনেক বড় ছিলো তার দুই ছেলে তিন মেয়ে মোট ৭ জনের বিশাল সংসার আর মামার তেমন একটা আয় ছিলোনা। তাই তার সংসারে অভাব লেগেই থাকতো এজন্য আমার মামাতো ভাই- বোনদের অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছে। যার কারনে অনেক সময় তাদের (মামাতো ভাই-বোনদের) কোন কোন আত্মিয়ের বাসায় থাকতে হয়েছে। আভাবে পড়লে মানুষ যে কত কষ্ট করে সেটা আমি দেখেছি এবং এখনও রাস্তা-ঘাটে যখন ঘুরতে বেরহই তখন হরহামেশাই দেখি। সবার জীবনেই এমন একটা ওভাবের সময় আসে- যাতে মানুষ তার জীবনকে বুঝতে পারে। আমার জীবনেও একটা সময় এসেছিলো যখন আমাকে না খেয়ে থাকতে হয়েছে রাস্তা দিয়ে পাগলের মত হাটতে হয়েছে কখনো ধানমন্ডি লেকে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে থেকেছি। যই হোক মামার পরিবারে অভাবের কারনে মাঝে মাঝে মামাতো বোনেরা - ভাইয়েরা আমাদের বাসায় এসে থাকতো। মামাতো ভাইদের সাথে আমি খেলা করতাম - বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতাম। মামাতো বোনেরা আমাকে বড় ভাইয়ের মত সম্মান করত আমিও তাদের ছোট বোনের মত সম্মান করত। মামার মেঝো মেয়ে যার নাম সিমা তাকে আমি অনেক পছন্দ করতাম কিন্তু সে আমাকে এড়িয়ে চলতো আমার ডাকে সে সাড়া দিতোনা। আমি তাকে বুঝতে পারিনি যে সে কি চায় বা কি জন্য এরকম করে। আমিও তার কাছে চাপার কোন ইচ্ছা প্রকাশ করতাম না। মনে মনে তাকে ভালোবেসে যেতাম যদি তাকে কোন দিন পাই তবে আমার আর কোন কিছু চাই না এরকম একটা ইচ্ছা আমার ছিলো। যেহেতু সে আমার অনেক ছোট আর অন্যদিকে মামাতো বোন তাই তাকে চাপ দিয়ে কিছু বলার ও করার মত সাহস ছিলো না। আমি যখন এস,এস,সি পরীক্ষা দিলাম এবং যেদিন আমার রেজাল্ট বের হলো সেদিন আনন্দে আমরা (আমার মামা, বড় ভাই, ছোট বোন, ও সিমা) সবাই মিলে গাড়ী নিয়ে ঘুরতে চলে গেলাম। এস,এস,সি পাশ করার পর এইচ,এস,সি ও ফরিদপুরের একটা কলেজে শেষ করলাম এইচ,এস,সি পাশ করার পর শুরু হয়ে গেল আমার আশা -ভরসা ভেঙ্গে যবার পালা। আমাকে আমার "বাবা - মা" ঢাকা পাঠিয়ে দিলো ভালো কোন কলেজে পড়াশুনা করার জন্য। আমাকে ভর্তি করিয়ে দেয়া হলো ঢাকা কলেজে এবং Aptech Computer Education সেন্টারে কম্পিউটার শিখার জন্য দুই জায়গায় আমার পড়াশুনা ভালোই চলছিলো। ঢাকায় আসার পর আমার আর ঘুম আসতো না মেসের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম কবে বাড়ী যেতে পারব। মাসে দু-বার বাড়ী যেতাম শুধুমাত্র সিমাকে দেখার জন্য। ঢাকায় "সিমার বড় বোন লিমা" থাকতো গুলিস্থানে আমি ঢাকায় পড়ালেখা করার সময় মাঝে মাঝে সিমা ঢাকায় আসত তার বোনের বাড়ীতে আমার সাথে তার কোন যোগাযোগ হতো না। যদি আমি লিমার বাসায় যেতাম তাহলে সিমা থাকলে সিমাকে দেখে চ্যলে আসতাম। একদিন আমি লিমার বাসায় গেছি দেখি "সিমা" কে তখন সিমাকে বললাম যে চল বানিজ্য মেলা থেকে ঘুরে আসি। সে রাজী হয়ে গেল আমরা বানিজ্য মেলায় গিয়ে ঘুরা-ঘুরি করে রাত ৭-৮ টার দিকে সিমাকে পৈছে দিয়ে আমি চলে গেলাম ধানমন্ডির দিকে। আমি ধানমন্ডিতে একটা মেসে থাকতাম। সেদিনও আমি জানতাম না যে সিমা আমাকে ভালোবাসে তাহলে হয়ত সেদিন তাকে কিছু বলতে পারতাম। যাই হোক ছোট বোনের মত করে বানিজ্য মেলা দেখিয়ে তাকে পৈছে দিলাম বাসায়। বানিজ্য মেলায় যাওয়ার আগেও ঢাকায় সিমাকে নিয়ে কয়েকদিন ঘুরেছি। কিন্তু তার সাথে আমার তেমন কোন খারাপ সম্পর্ক ছিলো না। আমি ঢাকা আসার পর কয়েক বছর বাড়ীর সাথে ঠিকমত যোগাযোগ ছিলো। কারন তিন বছর না জেতেই আমার "মা" আমার মনের মানুষ যাকে আমার জীবনের সাথে তুলনা করি তাকে বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেললেন। আমার জীবনে নেমে এলো ঘোর অন্ধকার আমি কি করব কোথায় যাব কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমি পাগলের মত হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে শুরু করে দিলাম। আমার "মা" আমাদের ব্যপারে সব জানত তবুও যে সে কি কারনে আমার "মা" সিমার বিয়ে দিয়ে দিলো শুধু আমার "মা" বলেই এটা করতে পেরেছে অন্য কারো "মা" হলে এটা করতে পারত না। আমার "মা" ছোটবেলা থেকেই কি করে আমার ক্ষতি করা যায় কি করলে আমি চুপ থাকবো সে কাজ করে আমাকে দমিয়ে রাখত। আজ আমার ছোট বোন (সিমা) স্বামীর সংসারে অনেক সুখে আছে। যেহেতু আমার ভালোবাসার মানুষটি সুখে আছে এটাই আমার জন্য অনেক আনন্দের ব্যপার। সে সুখে আছে জেনে আমি অনেক খুশি কারন আমি হয়ত তাকে এতটা সুখ দিতে পারতাম না। হয়ত আমি তার যোগ্য ছিলাম না। জাই হোক সিমার ঘরে দুইটি মেয়ে বড়টি মেয়েটির নাম "সাদিয়া" আর ছোট মেয়টির নাম "সিনহা"। দেখতে খুবই সুন্দর হয়েছে। সিমার স্বামীর নাম লিটু শুনেছি তার নাকি একটা গাড়ীর রেডিয়েটর এর দোকান আছে সেখান থেকে তার ভালোই আয় হয়। খেয়ে পরে অনেক সুখে আছে। আমি দোয়া করি তারা সুখে থাকুক সারাজীবন। অনেক চেষ্টা করেছি এ জীবন শেষ করে দেয়ার জন্য কিন্তু পারিনি আমার সামনে একজন না একজন এসে দাঁড়িয়েছ আমার পথের বাধা হয়ে। যাই হোক আমার পড়া লেখা শেষ না হতেই আমি একটি চাকুরীতে ডুকে পরলাম। সরকারী একটা প্রজেক্টের চাকুরীতে কারন আমার অবস্থা ততোদিনে আরো খারপ হতে হতে প্রায় না খেয়ে পথে বসার মত হয়ে গিয়েছিলো। ২০০৩ সালে আমি আমার চাকুরীতে যোগ দিই। প্রজেক্টের চাকুরী আজ বেতন হয় কাল হয় এভানে করে কেটে গেল আরো ৩ মাস। ঢাকায় যে বাসায় ভাড়া থাকতাম তারা ছিলো অনেক গরিব মানুষ তাদের জন্যও কষ্ট হতো কারন নিজেও খেতে পারিনা আবার বাড়ীয়ালার বাড়ীভাড়াও দিতে পারিনা তারাও আমার জন্য কষ্ট করে। আমার পড়ার বই ছিলো সেগুলো বিক্রি করে কিছু টাকা জোগাড় করলাম যাতে একমুঠো ভাত খেতে পারি। যাই হোক তিন মাস পরে বেতন পেলাম। আমার সকল সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। আমার দিন ভালোই যাচ্ছিলো খেয়ে-দেয়ে ভালোই ছিলাম। চাকুরী পাওয়ার দুই-তিন মাস পরে "সিমা" আমার মোবাইলে একটা ফোন দেয় অনেক কথা হয়। ভালো-মন্দ খোজ খবর নেই। সেদিন ব্যস্ততার কারনে বেশি কথা বলতে পারিনি। এর পর আর যোগাযোগ করিনি কারন আমি জানতাম সে যখন আমাকে ছেড়ে চলে গেছে তখন তাকে আমি আর কোন সমস্যায় ফেলবো না। আমার বুঝার ভুলছিলো সে যে আমাকে এখনো অনেক ভালোবাসে সেটা আমি জানতাম না। আমার চাকরি চলছে এক প্রজেক্ট হতে অন্য প্রজেক্ট এভাবে চলতে ছিলো হটাৎ আমাকে আমারা প্রজেক্ট থেকে পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় কার্জালয়ে সেখানে আসার সুবাদে আমি পেয়ে যাই। একটি আলাদা রুম, টেলিফোন, ইন্টারনেট লাইন। সরকারী ফোন পাওয়ার সুবাদে আমি তাকে একটি ফোন দেই। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসের কথা সে একটি অপরিচিত ফোন নাম্বার দেখে ফোনটি ধরে। তারপর সে আমাকে জানতে চায় আমি কে? আমি বলি আমি তোমার দুলাভাই, আবার আমি জানতে চাই আপনি কে সে আমাকে উত্তর দেয় যে আপনি আমার দুলাভাই হলে আমিকে তাতো আপনার জানার কথা। এভাবে তার সাথে চলতে থাকে অনেক কথা। তারপর তার সাথে আমার টেলিফনে পরিচয় হয়। তার কিছুদিন পরে ছিলো কোরবানির ঈদ। আমাদের মধ্য তুই-আপনি সম্পর্ক ছিলে ততো দিনে কথা বলে আমাদের সম্পর্কটা তুমিতে আমরা পরিবর্তন করে নিলাম। আমি তাকে বললাম যে আমি ফরিদপুর যাব কোরবানি দিতে তুমি পারলে ফরিদপুর এসো আমি তোমাকে দেখবো। যথারীতি কোরবানীর ঈদ আসলো আমিও ফরিদপুর গেলাম কোরবানী দিতে। কোরবানীর দিন সে আমাকে অবাক করে দিতে বিকাল তিনটার দিকে আসলো। আমি তাকে দেখে আবাক সে তার সুখের কথা বললো আমি বুঝতে পারলাম সে সুখে আছে। যেহেতু তার কাছে আমার আর কিছূ চাওয়ার বা পাওয়ার নেই সুতরাং সে সুখে থাকলেই আমি সুখি। আমি যথারীতি পরেরদিন ঢাকা চলে আসলাম। আসার পরে দশ পনের দিন সীমার সাথে আমি ইচ্ছা করেই কোন যোগাযোগ করিনি কারন সে সুখে আছে তাদের সব আছে, আর আমার কি আছে। একারনে তার সাথে আমি যোগাযোগ করিনি। একদিন সীমা আমাকে ফোন দিয়ে আমাকে বলে যে আমি তাকে কি কারনে ফোন দেইনা। আমি তাকে বলি যে, তুমি সুখে আছো এটাইতো আমার সুখ। আমি ফোন দিয়ে আর তোমাকে সমস্যায় ফেলতে চাইনা। তখন সে আমার উপর রাগারাগি শুরু করে দেয় এবং সে আমাকে বলে আমি যেন তাকে ফোন দেই।